প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীত প্রায় চলে এলো বলে। অন্যান্য ভিতর তুলনায় এ সময় একটু বেশিই যেন আলস্য এসে ভর করে। শীতের রাতে কম্বলের আরাম ছেড়ে অজু করে ফজরের নামাজে দাঁড়ানোটা অনেকের কাছে অনেক কষ্টসাধ্য হতে পারে। ফলে ফরজে সালাত ছুটে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
প্রিয় পাঠক আসুন আমরা আসন্ন শীতকালের কিছু ইবাদত সম্পর্কে জেনে নিই। শুধুমাত্র নিজেই জানবো না, নিয়মিত আমল করব এবং আমাদের প্রিয়জনদের জানতে ও আমল করতে সাহায্য করবো।
শীতকালে যে এবাদতগুলো করা উচিত |
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, শীতকাল হচ্ছে মুমিনের জন্য বসন্তকাল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১৬৫৬)
অর্থাৎ যে বান্দা শীতের তীব্রতা সহ্য করেও অজু করে নামাজের জন্য প্রস্তুত হয় তখন তা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দ হয়। তবে ওযুর সময়ে প্রতিটা অঙ্গে পরিমাণ মতো পানির ব্যবহার হয়েছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
আমি কি তোমাদের জানাবো না? কিসে তোমাদের পাপ মোচন হবে। এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। সাহাবারা বললেন, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। তিনি বললেন, শীতের কষ্ট সহ্য করেও সঠিকভাবে ওযু করা। (মুসলিম: ২৫১; তাফসীরে কুরতুবী)
শীতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ইবাদত হচ্ছে, সাওম পালন করা। এ সময়ে দিনের ব্যপ্তি রাতের তুলনায় কম থাকে। তাছাড়া সূর্যের প্রখরতাও থাকে না তেমন। তাই শীতকাল নফল সাওম পালনের আদর্শ সময়।
শীতকালের রাত দীর্ঘ হাওয়ায় মমিন ব্যক্তি যাত্রী কালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে। এবং দিন ছোট হাওয়ায় রোজা রাখতে পারে।
শীতকাল এলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) বলতেন,
হে শীতকাল তোমাকে স্বাগতম।
শীতকালে বরকত নাযিল হয়। শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দেন ছোট হওয়ার কারণে রোজা রাখা যায়। শীতকালে রাত দীর্ঘ হয়ে থাকে। তাই কেউ চাইলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর পরেও শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারে। শীতকালে তাহাজ্জুদের রয়েছে অন্যরকম মর্যাদা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে,
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আজকের দিনটি কতই না শীতল। হে আল্লাহ জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন। তখন আল্লাহ জাহান্নাম কে বলেন, নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা জাহান্নামের জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি তাকে জাহান্নামের জামহারি থেকে আশ্রয় দিলাম। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) জামহারি কি? নবীজি (সাঃ) বললেন, জামহারি এমন একটি ঘর যেখানে অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে। এর ভিতরের তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে যে,
একটা কথা আমরা অবশ্যই মনে রাখবো, আমাদের আশেপাশের অভাবী দরিদ্র মানুষগুলোকে যেন আমরা ভুলে না যাই। এই প্রচন্ড শীতেও রিক্সাওয়ালা, হকারদের মতো জীবন সংগ্রামী মানুষেরা সামান্য এক টুকরা পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে থাকে। এ ব্যাপার গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শীত সবার জন্যই আসে। আজ আপনার সামর্থ্য আছে বলে, এই শীতে মোটা কাপড় গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারণ করছেন। কিন্তু আপনার প্রতিবেশী দরিদ্র ভাইটি আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়াচ্ছেন। ইসলাম মোটেও এটা সমর্থন করে না। এই শীতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করুন। এবং যথাসম্ভব মানুষকে সহযোগিতা করুন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে মিলেমিশে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।